বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে?
যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনোটির অর্থ না বুঝিয়ে, অন্য কোনো পদকে বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।
যেমন: নীল কন্ঠ যার= নীলকন্ঠ (শিব)
✍️বহুব্রীহি সমাসে সাধারণত যার, যাতে ইত্যাদি শব্দ ব্যাসবাক্যরূপে ব্যবহৃত হয়।
✍️ব্রীহি কথাটির অর্থ হল ধান।
✍️বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ/ পরপদের অর্থ বোঝায় না।
বহুব্রীহি সমাস কত প্রকার ও কি কি?
বহুব্রীহি সমাস সাধারণত ১০ প্রকার।
• ১। সমানাধিকরণ বহুব্রীহি
• ২। ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি
• ৩। ব্যতিহার বহুব্রীহি
• ৪। নঞ্ বহুব্রীহি
• ৫। মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি
• ৬। প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি
• ৭। অলুক বহুব্রীহি
• ৮। সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি
• ৯। সহার্থক বহুব্রীহি
• ১০। নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহি সমাস
এই ১০ প্রকার বহুব্রীহি সমাস সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
১। সমানাধিকরণ বহুব্রীহি
পূর্বপদ বিশেষণ আর পরপদ বিশেষ্য / পূর্বপদ বিশেষ্য এবং পরপদ বিশেষণ হলে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি হয়।
উদাহরণঃ
বিশেষণ+ বিশেষ্য
• গৃহে স্থিতি যার= গার্হস্থ
• নীল কন্ঠ যার = নীলকন্ঠ
বিশেষ্য+ বিশেষণ
• কান কাটা যার= কানকাটা
• ঠোঁট কাটা যার= ঠোঁটকাটা
• পেট মোটা যার= পেটমোটা
২। ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি
বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ এবং পরপদ কোনোটিই যদি বিশেষণ না হয়ে বিশেষ্য হয়, তবে তাকে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি বলে।
উদাহরণঃ
• বীণা পাণিতে যার= বীণাপাণি
• কথা সর্বস্ব যার= কথাসর্বস্ব
• দুই কান কাটা যার=দু কানকাটা
• শূল পাণিতে যার = শূলপাণি
• চন্দ্র চূড়ায় যাঁর = চন্দ্রচুড়
• রত্ন গর্ভে যার = রত্নগর্ভা
৩। ব্যতিহার বহুব্রীহি
ক্রিয়ার পারস্পরিক অর্থে ব্যতিহার বহুব্রীহি হয়। এ সমাসে পূর্বপদে ‘আ’ এবং পরপদে ‘ই’ যুক্ত হয়।
উদাহরণঃ
• হাতে হাতে যে যুদ্ধ= হাতাহাতি
• কানে কানে যে কথা= কানাকানি
• লাঠিতে লাঠিতে যে লড়াই= লাঠালাঠি
• চোখে চোখে যে দেখা = চোখাচোখি
• গলায় গলায় যে মিল= গলাগলি
৪। নঞ্ বহুব্রীহি
বিশেষ্য পূর্বপদের আগে নঞ্ অব্যয় ( না, নেই, নয়, নাই) যোগ করে বহুব্রীহি সমাস করা হলে, তাকে নঞ্ বহুব্রীহি বলে। নঞ্ বহুব্রীহি সমাসে সাধিত পদটি বিশেষণ হয়।
উদাহরণঃ
• নাই জ্ঞান যার= অজ্ঞান
• নাই তার যার = বেতার
• নেই আদব যার= বেয়াদব
• নেই উপায় যার = নিরুপায়
• নেই অন্ত যার = অনন্ত
৫। মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি
বহুব্রীহি সমাসের ব্যাখ্যার জন্য ব্যবহৃত বাক্যাংশের কোনো অংশ যদি সমস্তপদে লোপ পায়, তবে তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি বলে।
উদাহরণঃ
• জন্মাষ্টমী= জন্ম হয়েছে অষ্টমীর দিনে যার
• চাদের মত সুন্দর মুখ যার= চাঁদমুখ
• চন্দ্র বদন মুখ যার = চন্দ্রবদন
• মৃগের মত নয়ন যার= মৃগনয়না
• গজের মত আনন যার=গজানন
৬। প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি
যে বহুব্রীহি সমাসের সমস্তপদে আ, এ, ও ইত্যাদি প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি বলা হয়।
উদাহরণঃ
• এক দিকে চোখ (দৃষ্টি) যার= একচোখা (চোখ+আ)
• ঘরের দিকে মুখ যার= ঘরমুখো (মুখ+ও)
• তিন (তে) ভাগ যার= তেভাগা (ভাগ+আ)
• দুই দিকে মন যার =দোমনা
• দুই তল আছে যার= দোতলা
৭। অলুক বহুব্রীহি
যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদের কোনো পরিবর্তন হয় না, তাকে অলুক বহুব্রীহি বলে।
• গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে =গায়েহলুদ
• হাতেখড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে= হাতেখড়ি
• মুখে ভাত দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = মুখেভাত
৮। সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি
পূর্বপদ সংখ্যাবাচক এবং পরপদ বিশেষ্য হলে, তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলা হয়।
উদাহরণঃ
• দশ আনন যার = দশানন(রাবণ)
• দশ ভুজ (হাত) যার = দশভুজা (দূর্গা)
• চার পায়া যার= চারপায়া(টেবিল)
• ত্রি নয়ন যার = ত্রিনয়ন (শিব)
• পঞ্চ আনন যার = পঞ্চানন
৯। সহার্থক বহুব্রীহি সমাস
সহার্থক পদের সঙ্গে বিশেষ্য পদের বহুব্রীহি সমাস হলে তাকে সহার্থক বহুব্রীহি সমাস বলে।
উদাহরণঃ
• বান্ধবের সহিত বর্তমান = সবান্ধব
• স্ত্রীর সহিত বর্তমান = সস্ত্রীক
• পুত্রের সহিত বর্তমান=সপুত্র
• পরিবারের সহিত বর্তমান= সপরিবার
• অর্থের সহিত বর্তমান= সার্থক
• শব্দের সঙ্গে বর্তমান = সশব্দ
• লজ্জার সঙ্গে বর্তমান = সলজ্জ
১০। নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহি সমাস
যে বহুব্রীহি সমাস কোন নিয়মের অধীনে নয় তাকে নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহি বলা হয়।
উদাহরণঃ
• দুদিকে অপ যার=দ্বীপ
• অন্তর্গত অপ যার =অন্তরীপ
• নরাকারের পশু যে= নরপশু
• জীবিত থেকেও যে মৃত= জীবন্মৃত
• পণ্ডিত হয়েও যে মূর্খ= পণ্ডিতমূর্খ