Latest Notes

চারণকবি কবিতা MCQ – ভারভারা রাও – একাদশ শ্রেণী সেমিস্টার ১ বিড়াল (প্রবন্ধ) MCQ- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় | Class 11 Semester 1 সাম্যবাদী নজরুল ইসলাম MCQ প্রশ্নোত্তর | একাদশ শ্রেণী বাংলা নুন – জয় গোস্বামী একাদশ শ্রেণী লালন শাহ্ ফকিরের গান একাদশ শ্রেণী সেমিস্টার ২ ভাব সম্মিলন – বিদ্যাপতি চারণকবি – ভারভারা রাও বাংলা সমার্থক শব্দের তালিকা বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ প্রবন্ধ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কবিতার প্রশ্ন উত্তর | একাদশ শ্রেণি সেমিস্টার ১
"দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর
লও যত লৌহ লৌষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর
হে নব সভ্যতা। "- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভুমিকাঃ সৃষ্টির শুরু থেকেই অরণ্য ছিল মানুষের পরম আত্মীয়, অকৃত্রিম বন্ধু । মানুষের আদিম বাসস্থান ছিল অরণ্য। সেখানে ছিল বাতাস উন্মুক্ত প্রান্তর, ধীর স্রোতা তটিনী এবং সীমাহীন নীল আকাশ। অরণ্যই দিয়েছে মানুষকে বেঁচে থাকার রসদ, প্রাণের নিঃশ্বাস ও আশ্বাস । কিন্তু কালের বিবর্তনে মানুষ তার অরণ্য কেন্দ্রিক বাসস্থান ছেড়ে শহরে বসবাস করতে শুরু করেছে। 

সভ্যতার অগ্রগতি ও অরণ্য নিধনঃ বর্তমান বিশ্বে মানুষ ক্রমাগত শহর ও নগর কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। এখানে জীবন আধুনিক ও উন্নত। উন্নয়ের প্রতিযোগিতায় সভ্যতার বিজয় রথ যত এগিয়েছে ততই সভ্যতা হয়ে উঠেছে যান্ত্রিক । যন্ত্রদানবের প্রভাবে অকাতরে অরণ্য নিধন চলছে অহরহ । শহরের সম্প্রসারণের জন্য, কলকারখানা প্রতিষ্ঠা, বহুতল আবাসন নির্মাণ, হোটেল- রিসর্ট নির্মাণ, সড়ক নির্মাণ, রেল লাইন নির্মাণ ইত্যাদি তৈরিতে ব্যস্ত মানুষ যেন অরণ্যের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমেছে। যে অরণ্য ছিল মানুষের পরম আত্মীয়, সেই অরণ্যের  উপর চলছে অকথ্য অত্যাচার, উচ্ছেদ। অরণ্য ধ্বংসের পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে জঙ্গলে বসবাসকারী  হাজার হাজার প্রাণীকূল। সবুজ বনানীর জায়গায় আজ শুধুই নিষ্প্রাণ ‘লৌহ, লৌষ্ট্র, কাষ্ঠ ও প্রস্তর।’

অরণ্য নিধনের প্রভাবঃ  গাছেরা পরিবেশে অক্সিজেন ও জলীয় বাষ্প ত্যাগ করে, মাটিকে ছায়া প্রদান করে এবং অনেক জীবের বাসস্থানরূপে কাজ করে। তাই গাছ কাটা হলে পরিবেশের ভারসাম্যের পাশাপাশি বাস্তুতন্ত্রও ব্যাহত হয়।

গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস শোষণ করে এবং বাতাসে অক্সিজেন গ্যাস নির্গত করে। অতএব অরণ্যবিনাশের সাথে সাথে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ বাড়তে থাকে যা পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ। 

এছাড়াও বন্যা,খরা ও ভুমিক্ষয় রোধে গাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অরণ্যের ধ্বংসের সাথে সাথে এই প্রাকৃতিক দূর্যোগের পরিমাণ বাড়তে থাকে।

কিছু বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীঃ অরণ্য নিধনের কারণে পৃথিবীতে যে কত প্রাণের সম্পূর্ণ অবলুপ্তি ঘটেছে তার হিসাব নেই। আধুনিক যান্ত্রিক সমাজে অরণ্য নিধন ও পরিবেশ দূষণের কারণে প্রতিনিয়ত পৃথিবী থেকে চিরতরে অবলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে কিছু প্রাণী ও উদ্ভিদ। বেঙ্গল টাইগার, হাতি, ভোঁদড়, লামচিতা, চিতা, বনরুই, উল্লুক, বনগরু, সাম্বার হরিণ, প্যারাইল্লা বানর, হিমালয়ান ডোরা কাঠবিড়ালি ও কালো ভালুক ইত্যাদি প্রাণীগুলো প্রায় অবলুপ্তির পথে। এই শতকে মরিশাস দ্বীপ থেকে হারিয়ে গেছে ডােডাে নামের পাখি। আমেরিকার প্রেইরি বনভূমি থেকে হারিয়ে  গেছে বাইসন, মেরু অঞ্চল হারিয়েছে স্বর্ণশৃগাল। এ ছাড়াও ধূসর মেটে তিতির ও বাদা তিতির পাখিও হারিয়ে গেছে।

অরণ্য ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাঃ আধুনিক নগর সভ্যতা মানব জীবনে অনেক অগ্রগতি এনেছে কিন্তু মানুষ হয়ে পড়ছে ক্রমেই হৃদয়হীন নিষ্ঠুর। এই সভ্যতা মানুষকে করে তুলেছে পরিভোগমুখী, উচ্চাভিলাষী, আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থসর্বস্ব। মানুষ হয়ে উঠছে অনেক বেশি যান্ত্রিক। মানুষের পরিভোগ চাহিদা হয়ে উঠছে আকাশচুম্বী। পরিবেশ দূষণে মানুষ অতিষ্ঠ। মানুষের জীবনে এসেছে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা। এই সবকিছু থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে পারে শুধু অরণ্য। তাই অরণ্যের পাশাপাশি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণও ভীষণ দরকার। কারণ ‘বন্যরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।’ এর জন্য দরকার সবুজের অভিযান অর্থাৎ বৃক্ষরোপণে মানুষকে সচেষ্ট হতে হবে বেশি করে।

অরণ্য ও অরণ্য প্রাণী সংরক্ষণের উপায়ঃ পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য, বনের বাস্তুতন্ত্রকে সুস্থিত করার জন্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে বন ও বন্যপ্রাণীকে সুরক্ষিত রাখার পদ্ধতি হল বন সংরক্ষণ। ভারতে ১৯৭২ সালে বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য আইন পাস হয়েছে। বন উন্নয়নের জন্য Central Forestry Commission তৈরি হয়েছে যার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, গ্রামে-গঞ্জে গাছপালার চারা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য ইদানীং গড়ে উঠেছে নানা আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংস্থা, যেমন—WWF বা ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড-লাইফ ফেডারেশন। কিন্তু সরকারি ভরসায় বসে থাকলে বন ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ সম্ভব নয়। মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে জেলায় জেলায় বৃক্ষরোপণ উৎসব পালন করতে হবে। এই দায়িত্ব আমাদের সবার। মাথায় রাখতে হবে ‘একটি গাছ একটি প্রাণ।’ স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। 

উপসংহারঃ আধুনিক মানুষকে বেঁচে থাকতে হলে প্রকৃতির  সাথে লড়াই করতে হবে। আধুনিক জীবনে কাঠের প্রয়োজন, তাই গাছ কাটতে হবে, কিন্তু তার বিকল্পটাও ভাবতে হবে। একটি গাছ কেটে ফেলার আগে দু’টি গাছ রোপণ করা প্রয়োজন। মানুষকে বুঝতে হবে এবং বোঝাতে হবে গাছ আমাদের আমাদের পরম বন্ধু। আমাদের নিজেদের অস্তিত্বের জন্যই গাছ দরকার। প্রকৃতির শোভা ও সৌন্দর্য্য তো মানুষের জন্যই। পাশাপাশি আমদের বোঝা উচিত এই পৃথিবীটা শুধুমাত্র মানুষের জন্য নয়, এটি সমানভাবে অরণ্য ও অরণ্যে বসবাসকারী সমস্ত প্রাণীকুলের।

এই প্রবন্ধ অনুসারে লেখা যায় – অরণ্য ও অরণ্য প্রাণী সংরক্ষণ, বন বন্যপ্রাণী ও মানবজীবন, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা, অরণ্য ও অরণ্য প্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা,

Spread the love

You cannot copy content of this page