Latest Notes

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কবিতার প্রশ্ন উত্তর | একাদশ শ্রেণি সেমিস্টার ১ বিশাল ডানাওয়ালা থুরথুরে এক বুড়ো – গাবিরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ সাম্যবাদী (কবিতা) – কাজী নজরুল ইসলাম ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (কবিতা)- মাইকেল মধুসূদন দত্ত তেলেনাপোতা আবিষ্কার(গল্প) – প্রেমেন্দ্র মিত্র ছুটি (Chhuti) – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিড়াল – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পুঁই মাচা MCQ একাদশ শ্রেণী | 1st Semester পুঁই মাচা-বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় MCQ from The Bangle Sellers – Sarojini Naidu

একটি নদীর আত্মকথা

ভূমিকা: ‘নদী আপন বেগে পাগল পারা ‘ – পাগলপারা জলস্রোতের ধারা নিয়ে মর্ত্যে আমার অবতরণ সগরবংশীয়
রাজা ভগীরথের হাত ধরেই। দেবাদিদের মহাদেব আমার দুর্বার কলকল্লোলকে ধারণ করেছিলেন আপন জটাতে। আমি গঙ্গা। ভৌগোলিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী আমার উৎসমুখ হিমালয় পর্বতের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ থেকে। সূর্যকিরণে তুষারবরফ ধৌত হয়ে আমার প্রাণের সৃষ্টি। পর্বতঢাল ভেঙে আমি ছুটে চলেছি মোহনার খোঁজে।

জনশ্ৰুতি : কথিত আছে, প্রজাপতি ব্রহ্মার কমণ্ডলু, নারীমূর্তি স্বরুপ লাভ করে আমার জন্ম। আবার বৈষুব মতানুসারে
ব্রহ্মা সতাদাচিতে তাঁর কমণ্ডলুর বারি দ্বারা বিঘ্নর পদ দৌত করে দিলে, বিন্নুর আশিসে জন্ম আমার। সগরবংশীয় রাজা ভগীরথ পূর্বপুরুষদের শাপমোচনের জন্য তপস্যাবলে আমাকে মর্ত্যে অবতরণ করান, আমার খরস্রোত জকুমুনির আশ্রম বিনষ্ট করালে কুদ্ধ মুনির উদরস্থ হই আমি, ভগীরথ তাঁকে তুষ্ট করলেন। নিজের উরুচ্ছেদে বইয়ে দিলেন আমাকে। আমার নাম জাহ্নবী। আমার জলস্পর্শে শাপমোচন হয় সগর রাজার শতসহস্র পুত্রবর্গের।

আমার গতিপথ : দুর্বার গতি পাহাড়ের স্নেহাঞ্চল ছাড়িয়ে আমি বয়ে যাই সমভূমি পেরিয়ে সমুদ্র অভিমুখে। অগণিত শহর, নগর, পল্লির জন্মকাহন আমার তরাবঙ্গের দুই তীর ঘেঁষে। কখনও পদ্মা, কখনও বা ভাগীরথী নামে বয়ে গিয়েছি পূর্ব থেকে পশ্চিমে, উত্তর থেকে দক্ষিণে। কল্লোলিনী কলকাতা, এলাহাবাদ, বারাণসী – ভারতের খ্যাতনামা সব শহর আমার তীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। স্বামীজির স্মৃতি বিজড়িত বেলুড় মঠ, রামকৃষ্ণদেবের দক্ষিণেশ্বর প্রতিষ্ঠা পেয়েছে আমার তীরেই। আমার পুতপবিত্র বারিধারায় সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা এই দেশ ভারতবর্ষ।

আমার গতিধারা : গঙ্গোত্রী থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত আমার উচ্চগতি। উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের মধ্যে অসংখ্য উপনদী
আমার মধ্য গতিধারায় মিলিত হয়েছে। যেমন- গোমতী, ঘর্ঘরা, গন্ডক ইত্যাদি। আমার নিম্নগতি বয়ে চলেছে ভাগীরথী ও পদ্মার মধ্য দিয়ে।

এখন আমি : সর্বসস্তাপহারিণী পবিত্রতায় আমি যে স্বর্গ রচনা করেছিলাম এ মর্ত্যলোকে, প্রাণসঞ্চার করেছিলাম যে
সভ্যতার, সেই আমি আজ কলুষিত শীর্ণকায়ায় বয়ে নিয়ে চলেছি সেই সভ্যতার অবক্ষয়িত রূপকে। উগ্র নগরায়ণের
ফলস্বরূপ কীটনাশক, রাসায়নিক, বর্জ্য বস্তুতে আমি আজ নাব্যতা হারাচ্ছি প্রতিমুহূর্তে। সভ্যতার সেতুবন্ধনে লৌহস্তম্ভ
রুদ্ধ করে চলেছে আমার গতিধারা। হৃদয় বিদীর্ণ করে চলেছে সভ্যতার উন্নয়ন। ছুটছে সভ্যতার চাকা আমার বুক চিরে। পতিতপাবনী আমি আজ ক্লান্ত, নিঃস্ব, জরাজীর্ণ।

উপসংহার: যে গঙ্গাস্নানে, যে গঙ্গাপুজোয় মানুষের পাপস্খালন, সেই পুণ্যবারিই যদি প্রতিমুহূর্তে কলুষিত হতে
থাকে, তাহলে অর্থ কী এই পুণ্যস্নানের? আধুনিক সভ্যতার কাছে আমার আর্তি  -আমার অস্তিত্ব বিনাশের মধ্য দিয়েই সভ্যতার অস্তিত্বের সংকট আসন্ন, নয় তো?

Spread the love

You cannot copy content of this page