কর্মধারয় সমাস কাকে বলে?
যে সমাসে বিশেষণ বা বিশেষণভাবাপন্ন পদের সাথে বিশেষ্য বা বিশেষ্যভাবাপন্ন পদের সমাস হয় এবং সমস্তপদে পরপদের অর্থই প্রধানরুপে প্রতীয়মান হয়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন-
নীল যে আকাশ = নীলাকাশ
শ্বেত যে বস্ত্র = শ্বেতবস্ত্র
সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন
কর্মধারয় সমাস কত প্রকার ও কি কি?
কর্মধারয় সমাস ৫ প্রকারঃ
ক) সাধারণ কর্মধারয় সমাস,
খ) মধ্যপদলোপী কর্মধারায়,
গ)উপমান কর্মধারায়,
ঘ) উপমিত কর্মধারায় এবং
ঙ) রূপক কর্মধারায় সমাস
ক) সাধারণ কর্মধারায় সমাসঃ
সাধারণ কর্মধারায় সমাসের তিনটি শ্রেণী আছে।
✍️বিশেষণ + বিশেষ্য (পূর্বপদ বিশেষণ এবং পরপদ বিশেষ্য)
উদাহারণঃ
• নীল যে পদ্ম= নীলপদ্ম
• সুন্দরী যে লতা= সুন্দরলতা
• অধম যে নর= নরাধম
• মহান যে রাজা= মহারাজা
✍️বিশেষ্য + বিশেষ্য (উভয়পদ বিশেষ্য)
উদাহারণঃ
• যিনি জজ তিনিই সাহেব= জজসাহেব
• যিনি রাজা তিনি ঋষি= রাজর্ষি
• যিনি পিতা তিনি দেব= পিতৃদেব
• যিনি ব্রাহ্মণ তিনি = ব্রাহ্মণপণ্ডিত
✍️বিশেষণ + বিশেষণ (উভয়পদ বিশেষণ)
উদাহারণঃ
• যিনি গণ্য তিনি মান্য = গণ্যমান্য
• যাহা মৃদু তাহাই মন্দ = মৃদুমন্দ
• যে শান্ত সেই শিষ্ট = শান্তশিষ্ট
• নীল অথচ লোহিত = নীললোহিত
(খ) মধ্যপদলোপী সমাসঃ
যে সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদের লোপ হয়, তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে।
উদাহারণঃ
• সিংহ চিহ্নিত আসন= সিংহাসন,
• সাহিত্য বিষয়ক সভা= সাহিত্যসভা,
• স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ= স্মৃতিসৌধ,
• চিকিৎসা বিষয়ক শাস্ত্র= চিকিৎসাশাস্ত্র
• ঘরজামাই= ঘর আশ্ৰিত জামাই,
• মৌ সংগ্রহকারী মাছি= মৌমাছি,
• মোম নির্মিত বাতি= মোমবাতি
(গ) উপমান কর্মধারয়ঃ
সাধারণ গুণবাচক পদের সাথে উপমানবাচক পদের যে সমাস হয় তাকে উপমান কর্মধারায় সমাস বলে।
যেমন-
ভ্রমরের ন্যায় কৃষ্ণ কেশ= ভ্রমরকৃষ্ণকেশ।
এখানে ‘ভ্রমর’ উপমান ও ‘কেশ’ উপমেয় এবং ‘কৃষ্ণত্ব’ সাধারণ ধর্ম।
👉উপমান -এর অর্থ তুলনীয় বস্তু।
👉প্রত্যক্ষ কোনো বস্তুর সাথে পরোক্ষ কোনো বস্তুর তুলনা করলে প্রত্যক্ষ বস্তুটিকে বলা হয় উপমেয়, এবং যার সাথে তুলনা করা হয়েছে তাকে বলা হয় উপমান।
উদাহারণঃ
• তুষারের ন্যায় শুভ্র= তুষারশুভ্র,
• অরুণের ন্যায় রাঙা= অরুণরাঙা,
• রক্তের ন্যায় লাল= রক্তলাল,
• ঘনের ন্যায় শ্যাম= ঘনশ্যাম
• বকের ন্যায় ধার্মিক= বকধার্মিক
• হিমের ন্যায় শীতল= হিমশীতল
• কাজলের ন্যায় কালো= কাজলকালো
(ঘ) উপমিত কর্মদারয় সমাসঃ
উপমেয় পদের সঙ্গে উপমানের যে সমাস হয় তাকে উপমিত কর্মধারায় সমাস বলে ।
যেমন-
কথা অমৃতের ন্যায় = কথামৃত
👉এক্ষেত্রে সাধারণ গুণটি ব্যাসবাক্য বা সমস্তপদে থাকে না, অনুমান করে নেওয়া হয়।
👉এ সমাসে উপমেয় পদটি পূর্বে বসে।
উদাহরণঃ
• মুখ চন্দ্রের ন্যায়= চন্দ্রমুখ,
• পুরুষ সিংহের ন্যায়= সিংহপুরুষ
• চরণ কমলের ন্যায় = চরণকমল
• বীর সিংহের ন্যায়= বীরসিংহ
• নর সিংহের ন্যায়= নরসিংহ
(ঙ) রূপক কর্মধারায়ঃ
উপমান ও উপমেয়র মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হলে তাকে রুপক কর্মধারায় সমাস বলে ।
যেমন-
মন রূপ মাঝি= মনমাঝি
👉 এ সমাসে উপমেয় পদ পূর্বে বসে ও উপমান পদ পরে বসে।
👉 সমস্যমান পদে ‘রূপ’ অথবা ‘ই’ যোগ করে ব্যাসবাক্য গঠন করা হয়।
উদাহারণঃ
• বিদ্যা রুপ ধন= বিদ্যাধন
• হৃদয় রূপ মন্দির= হৃদয়মন্দির
• জ্ঞান রূপ বৃক্ষ= জ্ঞানবৃক্ষ
• জীবন রূপ প্রদীপ = জীবনপ্রদীপ
• শোক রূপ অনল= শোকানল
• জীবন রূপ স্রোত= জীবনস্রোত